শিরোনাম
এনায়েত হোসাইন ভূঁইয়া মামুন(রায়পুর প্রতিনিধি) | ১১:৪৭ পিএম, ২০২১-০২-১৩
স্থানীয় নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট দিতে হবে। যারা ভোটারদের মিথ্যা কথা বলে লোভ-লালসা দিয়ে প্রলুব্ধ করে, নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়, অন্যায় ও অবৈধ কার্যক্রমে লিপ্ত হয়, ভোট ক্রয়-বিক্রয় করে, জাল ভোট প্রদান করে, ভোটকেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়; তাদেরকে বর্জন করতে হবে। ভোটের মতো একটি পবিত্র আমানতকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে ভোটের বিষয়টি শুধু পার্থিব নয়, পরকালেও এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
রোজ কিয়ামতের(পুনরুত্থানের) দিন এ বিষয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিলে তো কথা নেই। কিন্তু জেনে-শুনে, অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ প্রার্থীকে ভোট দিলে তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। ধর্মীয় দৃষ্টিতে ভোট ও ভোটাধিকারকে একটি সাক্ষ্য এবং সুপারিশ বলে মনে করে। বস্তুত কাউকে ভোট দেয়ার অর্থ হলো তার ব্যাপারে এ সাক্ষ্য দেয়া যে, তিনি সৎ ও যোগ্য। এর বিপরীতে কোনো অসৎ ও অযোগ্যকে ভোট প্রদান বস্তুত ওই প্রার্থী সম্পর্কে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। এটা মহাপাপের কাজ। কুরআন, হাদীস সহ সকল ধর্মগ্রন্থেই এমন কাজ করতে বারণ করা হয়েছে।
মিথ্যা সাক্ষ্য প্রসঙ্গে কুরআন কারিমে ইরশাদ হচ্ছে : ‘তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিরত থাক।
’ সূরা হজ : ৩০
ভোটের প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-শুনে ভোট দেয়া নাগরিক দায়িত্ব ও ধর্মের বিধান। ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে টাকার লোভ, দুর্নীতি আর পেশীশক্তির কাছে জিম্মি হওয়া যাবে না। কারণ নির্বাচনের দিন ভোটের মাধ্যমে যে বীজ বপন করা হয়, তার ফসল পাওয়া যায় পরবর্তী পাঁচ বছর। তাই বুঝে-শুনে ভোটাধিকার প্রয়োগ না করলে সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু ও যথাযথ বিকাশের জন্য শুধু ভোটের দিনই নয়, তার পূর্বের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভোটের প্রাক্কালে প্রার্থীদের অতীত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। ভোট প্রদানের সময় প্রার্থীর সততা ও যোগ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ভোট দেয়া এক মহান দায়িত্ব ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়। সুতরাং ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে সকল নাগরিককে হতে হবে দায়িত্বশীল ও খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে প্রধান্য দিতে হবে। টাকার বিনিময়ে ভোট বিক্রয় করা যাবে না। অন্যান্য চুরির ন্যায় ভোট চুরি করাও একটি গুরুতর অপরাধ। জাল ভোট প্রদান ও অন্যকে ভোট প্রদানে বাধা প্রদানকারী রাষ্ট্রীয় অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হবে। একজন প্রকৃত মানুষ নিজে অন্যায় করবেন না এবং অন্যকে অন্যায় করার সুযোগ দেবেন না।
মানুষ মূর্তির মতো নির্বোধ নয়। ফেরেশতার মতো নির্ভুল নয়। শতভাগ ভালো মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তারপরেও ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, হক ও বাতিল, ঈমান ও কুফর, সুন্দর ও অসুন্দর এর পার্থক্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে আপনার ভোট হতে পারে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কল্যাণ ও অকল্যাণের এ মিশ্রিত সময়ে অপেক্ষাকৃত তুলনামূলক সৎ, ভালো পরোপকারী ও মযলুম মানুষগুলো হতে পারে আপনার সমবেদনার আশ্রয়স্থল। নির্বাচন পরবর্তী জনপ্রতিনিধিরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অটলভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলে জনগণ আরো খুশি হতেন। এরপরেও একজন সচেতন নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব সৎ মানুষগুলোকে সমর্থন দেওয়া।
ইসলামের আলোকে ভোটের দৃষ্টিভঙ্গি নি্ম্নে উল্লেখ করা হলো:
১। ভোট হলো একটি সুপারিশ। এ প্রসঙ্গে কোরআনের বক্তব্য হচ্ছে, ‘কেউ কোনো ভালো কাজে সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ রয়েছে, আর কেউ মন্দ কাজে সুপারিশ করলে তাতেও তার অংশ রয়েছে’ (সূরা নিসা আয়াত নং ৮৫)। সুতরাং আপনার সুপারিশটি যেন সুন্দর ও বাস্তবধর্মী হয়।
২। ভোট হলো একটি সাক্ষ্য। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো। আল্লাহর ওয়াসতে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য প্রদর্শন করো, যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়, সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন হোক আল্লাহ্ই শুভাকাক্সক্ষী তোমাদের চেয়ে। সুতরাং তোমরা বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ো না। যদি তোমরা প্যাঁচালো কথা বলো অথবা পাশ কেটে যাও তবে তোমরা যা করছ আল্লাহ্ তো তার সম্যক খবর রাখেন’ (সূরা নিসা, ৪: ১৩৫)। মহানবী (সা.) বলেছেন- মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া কবিরা গোনাহ। সুতরাং একজন ভোটার হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন সাক্ষীদাতা।
৩। ভোট অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, তুমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাতের অথবা মুখের অথবা অন্তরের সাহায্যে লড়াই কর। (মিশকাত, পৃষ্ঠা-৪৩৬)। হারজিত থাকবেই। এ লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করা মুমিনের দায়িত্ব।
৪। ভোট যুলুমের বিরুদ্ধে মযলুমের রায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি সাহায্য কর, তোমার ভাইকে সে যদি যালিম কিংবা মযলুমও হয়। এর ব্যাখ্যায় মহানবী (সা.) নিজেই বলেন, যালিমকে সাহায্য দানের অর্থ হলো যুলুম থেকে নিবৃত্ত রাখা। তাই ভোট হতে পারে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে একটি নিরব প্রতিবাদ।
৫। ভোট হলো একটি দাওয়াত। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, তোমরা এমন একটি দল, মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে। মারুফ কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে। এতেই তোমরা সফল হতে পারবে। সুতরাং ইসলাম ও মুসলমানের দিকে আহবানের ক্ষেত্রে ভোট একটি কৌশলগত দাওয়াত।
৬। ভোট হলো ঐক্যের সোপান। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘ঐক্যবদ্ব্যভাবে আমার রুজ্জুকে ধরে রাখ এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আল- ইমরান)। অন্যৈক্যের কারণেই আজ মুসলমানদের বিপর্যয়। আমরা হতাশ হই যখন দেখি ইসলামি দলগুলোর মধ্যেও প্রবল বিরোধ। এক্ষেত্রে ইখতিলাফ মাআল ইত্বিহাদ নীতির ভিত্তিতে আমাদেরকেঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। নয়তো একসময় সকল ইসলামি শক্তিই অসহায় হয়ে যাবে।
৭। ভোট হলো একটি আমানত। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমানত তার হক্দারকে প্রত্যার্পণ করার জন্য আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন। (সূরা নিসা), সুতরাং আপনি যাকে আপনার কাজের দায়িত্ব প্রদান করছেন তার ইচ্ছা ও যোগ্যতা উভয়ইটি দেখতে হবে।
৮। ভোট হলো নেতা/প্রতিনিধি নির্বাচনের কৌশল। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর তাদের নবী তাদেরকে বলেছিল, আল্লাহ্ অবশ্যই তালুতকে তোমাদের রাজা করেছেন। তারা বললো, আমাদের উপর তার রাজত্ব কীরূপে হবে; যখন আমরা তার অপেক্ষা রাজত্বের অধিক হক্দার এবং তাকে প্রচুর ঐশ্বর্য্য দেয়া হয়নি। নবী বললেন, আল্লাহ্ অবশ্যই তাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন, আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা স্বীয় রাজত্ব দান করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাবান।’ (সূরা বাকারা ২৪৭), সুতরাং জনগণের প্রতিনিধি কেমন হবে এবং আপনার প্রতিনিধি কেমন হবে। এটা ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে।
৯। ভোট হলো নাগরিকের সমর্থনের একটি মাধ্যম। আপনি কাকে সমর্থন করবেন? এটি ভোটের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রোমানরা নিকটবর্তী নিম্ন ভূমিতে পরাজিত হয়েছিল। তাদের পরাজয়ের কয়েক বছরের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার আদেশে আবার তারা বিজয়ী হবে। অগ্রপশ্চাত তারই হাতে। এতে মুমিনগণ আনন্দিত হবে। (সূরা রোম- ১-৪),
ভোটও একটি আমানত, সুতরাং যে এই ভোটের পাওনাদার, ভোটটি তাকে পৌঁছে দেয়া আপনার পবিত্র দায়িত্ব। সৎ ও যোগ্য প্রার্থী এই ভোটের পাওনাদার। সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে আপনার ভোট প্রদান করুন। পক্ষান্তরে অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেয়া আমানতের খেয়ানত করা।
হাদীস শরীফে আসছে, সাহাবাগণ রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল কেয়ামত কখন হবে? রাসূল (সাঃ) জবাব দিলেন, যখন আমানতের খেয়ানত করা হবে।
সাহাবাগণ আবার প্রশ্ন করলেন , হে আল্লাহর রাসূল! আমানতের খেয়ানত কিভাবে হয়?
রাসূল (সাঃ) বললেন, যখন অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হবে, তখন কিয়ামতের জন্য অপেক্ষা করবে। সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট হলো যে, ভোটের মত পবিত্র আমানতকে যথা স্থানে প্রয়োগ করাই আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিই ভোট পাওয়ার অধিকার রাখে। তাই আসুন আমরা সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে, তাদের প্রতি নিজেসহ পরবারবর্গকে ভোট প্রদান করার প্রতি যত্নবান হই।
আল্লাহ আমাদের সহায়ক হোন।
ভোট সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি লিখেছেন আমাদেরই সহকর্মী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌরসভার সন্তান এনায়েত হোসাইন ভূঁইয়া মামুন।
লক্ষ্মীপুর৭১অনলাইন : মোঃ নুর হোসেন,কমলনগর,(লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুর কমলনগরে দৈনিক আমার সংবাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী জ...বিস্তারিত
স্টাফ রিপোর্টার : চাটখিল প্রেসক্লাবের সভাপতি হাবিবের ভাতিজা পরিচয়ে সাংবাদিকে হত্যার হুমকি থানায় অভিযোগ চাটখ...বিস্তারিত
এনায়েত হোসাইন ভূঁইয়া মামুন(রায়পুর প্রতিনিধি) : সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীরের পরিবারের প্রতি মানবিক সাহায্যের আকুল আবেদন। সড়ক দূর্ঘটনায় অক...বিস্তারিত
লক্ষ্মীপুর৭১অনলাইন : আজ চার ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর পাকহানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সর্বাত্...বিস্তারিত
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি ব্যুরো(রবিন হোসেন তাসকিন) : লক্ষ্মীপুর জেলা-প্রশাসকের স্ব পরিবার করোনায় আক্রান্ত লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জন...বিস্তারিত
লক্ষ্মীপুর৭১অনলাইন : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে সন্ত্রাস দুর্নীতি দর্শন মাদককে না বলার শপথ ধর্ষণ, দু...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2021 lakshmipur 71 | Developed By Muktodhara Technology Limited