শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১২:১২ এএম, ২০২০-০৭-১২
25 শে আগস্ট 2017 সাল। বর্ণনামতে সন্ধ্যার কিছু পরে রাতের অন্ধকারে। হঠাৎ করে আগুনের লেলিহান শিখা । গ্রামের প্রতি বাড়ী আগুনে জ্বলছে। হঠাৎ করে তাদের বাড়ির মধ্যে হৈচৈ। অজিফা বেগম। তিন সন্তানের জননী। পারিবারিকভাবে খাবার খাবে। এমন সময় দুইজন ব্যক্তি জোরপূর্বক মুখ বেঁধে নিয়ে গেল। অবলা অবেলা অবচেতন হয়ে তাদের সাথে চলে গেল।
তাদের সাথে কিছু একটা হয়ে গেল। সহজ সরলা যা অনিবার্য তা কে কাটিয়ে উঠতে পারেনি।তাদের হাত থেকে কোথায় গিয়েছে তার সন্তানরা তা জানেনা। আজও জানে না। এখন পর্যন্ত জানে না। এখন কিন্তু আর জানার সুযোগ নেই, সময় নেই, পরিস্থিতি ও নেই, তেমন কেউ সাহায্যে এগিয়ে নেই, যে কেউ একজন তাদের মায়ের খবর দিবে।
রাশেদ অবিবাহিত। চিংড়ী ঘেরের কাজ করে। মেদি বাজার মাছের ব্যবসা ছিল। সংসারী। এর আগের বার নির্বাচনের সময় তার বাবা কোন এক দেশের শরণার্থী হয়ে মায়ানমার ছেড়েছে। সে 10 বছর আগের কথা। কোন দেশে আছে তা তারা জানে না। তাদের কাছে তাদের বাবা মৃত। তাদের ধারণা তার বাবার কাছে ও তার বাবা নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত হয়েই আছে। রাশেদ মাছ বিক্রি করে ছোট বোন রাখাইন(5) এর জন্য একটি লিপিস্টিক ও আইসক্রিম কিনে এনেছিল।বাড়িতে প্রবেশের পূর্বেই দাও দাও করে ঘরে আগুন জ্বলা দেখে। বাসার ভেতর প্রবেশ করতেই রাখাইন বাহিরে এসেছিল। রাখাইন কে কোলে নিয়ে দূরে সরে যাওয়ার সময় খেয়াল হলো তার মায়ের কথা। তার মা অজিফা বেগম ততক্ষণে তাদের দৃষ্টির বাইরে।
সেতারা র বয়স 14 বছর।দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে ।তার পাশের ঘরে তাকে নিয়ে কয়েকজন :;"'!? সেতারার চিৎকারে রাশেদ এগিয়ে যেতেই তাকে ধরে নিয়ে গেল। রাশেদ সহ 4 জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ! রাশেদ পরের জীবনে পরপারে রওনা দিলো।
সেতারার ডাক-চিৎকারে উহ আহ শব্দ পাশে যাওয়ার জন্য শিশু রাখাইন ছাড়া সেদিন কেউ ছিলনা। মংডু জেলার পঞ্চীবং গ্রামে রাখাইন এর জন্ম। তখন তার বয়স পাঁচ বছর। সেতারার চিৎকারে পাঁচ বছর রাখাইনের কি করার ছিল। তবুও এগিয়ে গিয়েছিল।
অশ্রুসিক্ত শিশুর চিৎকার সেদিন কেউ শুনেনি। সেতারা সেদিন পন্য হয়ে তাদের হাতে চলে গেল।
রাখাইনের বোঝার বয়স হয়নি। 14 বছরের সেতারা কে নিয়ে তারা কি করবে। মা মা শব্দ উচ্চারণ করছে। কিন্তু মা তো নেই। বোনের জন্য আহাজারি চলছে তার ভিতরে। বড় ভাই বুলেটে নিহত । মা এবং বোন ততক্ষণে কি কাজ করছে বা তাদের উপর কি করা হচ্ছে সেটি কিন্তু রাখাইন জানেনা। সে সম্পর্কে তার ধারণা নেই। না বুঝে উঠতে গ্রামবাসীর সাথে পাঁচ বছর বয়সে চলে আসতে বাধ্য হলো সে। বয়স তার যাই হোক সেদিনের সিদ্ধান্ত নিতে তাকে বেগ পেতে হয়নি।
রাখাইনের চোখ দেখে মনে হয়েছে ভিতরে অনেক কষ্ট। রাখাইন এর ইতিহাস দুইশ বছরের বেশী রাজা বাদশা রা রাখাইন অস্থিরতা দিয়েছে।বার বার তার বুক থেকে রাখাইন দের বের করে দিয়েছে।হাজার ও রাখাইন দের কাছে রাখাইন রাজ্যের ইতিহাস অনেক কষ্টের চমৎকার! 5 বছরের একটি শিশুকে তার রাষ্ট্র ছেড়ে মাতৃভূমি ছেড়ে মাতৃগর্ভের আশ্রয় ছেড়ে বড় ভাই বোনের স্নেহ ভালোবাসা হারিয়ে আশ্রয়ের জন্য অন্য একটি রাষ্ট্রে গ্রামবাসীর সঙ্গে রওনা দিবে,, এই সিদ্ধান্ত নিতে তার মোটেও দেরি হয়নি।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সে নিজেও চিন্তা করলে অবাক হবে এরকম পরিস্থিতিতে তিনি কি করতেন? কিন্তু রাখাইনদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে কোন বেগ পেতে হয় না। কারণ রাখাইন এর পিছনে আছে রাখাইনদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ সংস্কৃতি, ধর্ম, বারবার রাষ্ট্র হারানোর অভিজ্ঞতা, বারবার ভূখণ্ড থেকে চলে আসার যন্ত্রণা, বারবার শিকড় হারানোর ট্রাজেডি।
রাখাইনের বয়স এখন আট বছর। তার কেউ নেই। রাখাইন এখন রাখাইন রাজ্যের তমব্রু সীমান্তে আছে। ওপাশে কাঁটাতারের বেড়া। রাখাইন তার রাখাইন রাজ্যের দিকে যেতে পারে না। আরেক পাশে তমব্রু বাংলাদেশের সীমান্ত।
মাঝখানে পাহাড়ের ঢাল থেকে তৈরি হওয়া পানির ক্যানাল। 150 মিটার নোম্যান্সল্যান্ড। সেখানেই কোনো একটি ঘরে পন্চিবং গ্রামের কেউ একজনের সাথে বসবাস। পানির ক্যানাল পার হওয়ার জন্য একটি বাঁশের ব্রিজ আছে। সে ব্রিজের উপর মাঝেমধ্যে এসে সীমান্তের সঙ্গে কথা বলে। কারণ এই সীমান্তে তাদের বাজার করতে হয়, চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়, খাবার নিতে হয়।
রাখাইন কে এই সীমান্তের নিকট থেকে লিপিস্টিক ও আইসক্রিম কিনতে হয় এখন। পিছন দিকের যে সীমান্ত সেখান থেকে শুধু বুলেটের শব্দ পায়। উঁকিঝুঁকি মেরে যেতে গেলেও কাঁটাতারের বেড়া। রাখাইন এখন রাখাইন হতে বাইরে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে তাকে সীমান্তে রাখা হয়েছে। এ পাশের সীমান্ত তার সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।
সীমান্তের কাছে রাখাইনের অনুরোধ বেড়ে ওঠা এবং বড় হওয়ার জন্য তার কাটার বেড়া ভেদ করে রাখাইন রাজ্যে যাবে। দুই পাশে সীমান্ত মাঝখানে নো ম্যান্স ল্যান্ড। সেখানে শিশু রাখাইন এর বসবাস।সীমান্তের সাথে রাখাইন এর বসবাস।
সীমান্ত তার একমাত্র সংগী।
সে তার দেশে ফিরে যেতে চায়। যা হারিয়েছে তার চেয়ে আরও কিছু হারিয়েও ফিরে যেতে চায়। তার চাহনি দেখে মনে হয়েছে মাতৃভুমিতে যেতে যদি নিজেকেও হারিয়ে দিতে হয় তবুও সে রাজী।সীমান্তের কাছে তার অনুরোধ সে বড় হতে চায় এবং রাখাইন তার রাখাইন রাজ্যের নাগরিক অধিকার চায়।
(এক রোহিঙ্গা শিশুর জীবন থেকে সম্পাদিত)
ইমাউল হক পিপিএম
লক্ষ্মীপুর৭১অনলাইন : কোথাও সাংবাদিক নির্যাতন, হামলা-মামলার ঘটনায় স্থানীয় প্রতি ১০ জনের ৩জন সরাসরি অপরাধীর পক্ষাবলম্বন...বিস্তারিত
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি ব্যুরো(রবিন হোসেন তাসকিন) : পবিত্র মাহে রমজানের ৩য় দিনে অসহায় চিহ্নমূল পথচারী,রিক্সাচালকদের মাঝে ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের ...বিস্তারিত
লক্ষ্মীপুর৭১অনলাইন : লালমনিরহাটে মাদকসহ সাংবাদিক জাহাঙ্গীর শাহিন আটকের ঘটনার প্রকৃত সত্যতা ও রহস্য উৎঘাটনের জন্য বিচ...বিস্তারিত
লক্ষ্মীপুর৭১অনলাইন : আমজাদ হোসেন, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি । লক্ষ্মীপুর রামগতি উপজেলাতে ২য় রমজানে গত- (১৫ এপ্রিল) ব...বিস্তারিত
লক্ষ্মীপুর৭১অনলাইন : সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে ভারতীয় মদের চালান আটক করে বিজিবি। বিজি...বিস্তারিত
আহাম্মদ কবির (সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি) : সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে বখাটেদের দাড়াঁলো অস্ত্রের আঘাতে এক সংখ্যালঘু পরি...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2021 lakshmipur 71 | Developed By Muktodhara Technology Limited